ইসলাম ডেস্ক ॥ মহাগ্রন্থ কোরআনে কারিম মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ আসমানি কিতাব।
অপরাপর আসমানি কিতাবের মতো এটি নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চল, জনগোষ্ঠী, ভাষাভাষী কিংবা কোনো সময়ের জন্য নয়- বরং কিয়ামত অবধি আগত সমগ্র মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ পথ নির্দেশিকা।
মানবজীবনের প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ই বাদ যায়নি এ গ্রন্থে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি এ কিতাবে কিছুই বাদ দেইনি।’ সূরা আনআম: ৩৮
কোরআনে কারিমের বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য হলো- এর সাহিত্য মান। সেই সঙ্গে ভাষার লালিত্য, অপূর্ব রচনাশৈলী, বর্ণনার নৈপূণ্য, ভাবের গাম্ভির্য, যুক্তির দৃঢ়তা, তথ্যের বিশুদ্ধতা, সাবলীল ও চিত্তাকর্ষক গাঁথুনী- এক কথায় কোরআনে কারিমের শিল্প-সাহিত্য সাহিত্যের যে কোনো মানদ-ে উত্তীর্ণ অনন্য এক গ্রন্থ।
কুরআনে কারিমের আরেক বৈশিষ্ট্য হলো- কোরআন অবতীর্ণের যুগ থেকে শুরু করে প্রতিটি যুগে যে শাস্ত্রের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, সে শাস্ত্রের মানদ-েই গ্রন্থটি উত্তীর্ণ। তা কোরআন অবতীর্ণের যুগে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের মান বিচারে যেমন সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত, তেমনি বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগেও সর্বমহলে সমাদৃত ও নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স বুক।
কোরআনের শিল্প-সাহিত্যমান এত উন্নত যে, তদানীন্তন আরবি কবিতা-সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র খ্যাত প-িতরা কোরআনে ছুঁড়ে দেওয়া কোরআনের অনুরূপ একটি গ্রন্থ কিংবা দশটি সূরা সর্বশেষ অন্তত একটি সূরা হলেও তৈরি করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। বরং তারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো বিমোহিত চিত্তে অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে- এটি মানুষের সৃষ্ট হতে পারে না।
নবী-রাসূলরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নব্ওুয়ত ও রিসালাতের কথা প্রকাশ করলে সমকালীন মানুষের সচরাচর একটি স্বভাব ছিলো- তারা ওই নবী-রাসূলের কাছে অলৌকিক কিছু প্রদর্শন করার জন্য দাবি করত। আর নবী- রাসূলরাও আল্লাহর নির্দেশে তাদের কিছুকিছু আবদার পূরণ করতেন।
এক্ষেত্রে হজরত মূসা (আ.) কর্তৃক বিশেষ লাঠি দ্বারা বিভিন্ন মুজেযা প্রদর্শন, হজরত ঈসা (আ.) কর্তৃক মৃত ব্যক্তিকে ক্ষণিকের জন্য জীবিতকরণ এবং শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক চাঁদকে দ্বিখ-িতকরণইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে কাফের, মুশরিকদের অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের অযৌক্তিক দাবি ক্রমশঃ বাড়তে থাকলে আল্লাহতায়ালা তাদের দাবীর অসারতা প্রমাণের পাশাপাশি স্বয়ং কোরআনই অলৌকিকত্ব প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ঘোষণা করে বলেন- ‘এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি; যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়। বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে অনুগ্রহ ও উপদেশ।’ -সূরা আল আনকাবুত: ৫১
সুতরাং বলা যায়, মহাগ্রন্থ কোরআনে কারিম হলো-অলৌকিক একটি কিতাব। এ গ্রন্থের প্রতিটি আয়াতে, সূরায় রয়েছে কোনো না কোনো অলৌকিকত্বের ছাপ। যার কোনোটি হয়ত আবিষ্কৃত আর কোনোটি এখনও অনাবিষ্কৃত।
কোরআনে কারিমের এ অলৌকিকত্ব কোরআন অবতীর্ণের যুগে যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি পরবর্তী যুগেও এমনকি অদ্যাবধি প্রকাশ হয়েই চলছে। যে যুগে যেসব শাস্ত্রের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে আর সে শাস্ত্রের আলোকে যখন কোরআনকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, তখনই এ কোরআন ওই শাস্ত্রের মানদ-ে উন্নীত একটি অলৌকিক কিতাব হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে- যেন তা কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
এ বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে, ‘অচিরেই আমি আমার নিদর্শনসমূহ তাদেরকে দেখিয়ে দেব বিশ্ব জগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে, যাতে তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য।’ -সূরা ফুসসিলাত: ৫৩
পবিত্র কোরআন স্বতন্ত্র কোনো বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়, তথাপি বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষ সাধনের এ যুগে আবিষ্কৃত নতুন নতুন অনেক তত্ত্ব-উপাত্তের সঙ্গে কোরআনের বর্ণনারকোরআন নিয়ে অসংখ্য গবেষণা মানুষের জ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত করেই চলছে
অপূর্ব মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যা কোরআনের আরেক বিশেষ অলৌকিকত্ব।
পবিত্র কোরআন চিরন্তন, শাশ্বত ও কিয়ামত অবধি মানবজাতির জন্য একমাত্র পথ নির্দেশিকা বিধায় এ গ্রন্থের অলৌকিকত্বও চিরন্তন ও শাশ্বত।
কোরআন নিয়ে অসংখ্য গবেষণা মানুষের জ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত করেই চলছে। নতুন নতুন গবেষণায় বেরিয়ে আসছে কোরআনের চমকপ্রদ নানা তথ্য-উপাত্ত। কোরআনের এ শৈল্পিক সৌন্দর্য তার পাঠক ও গবেষককে কোরআন নিয়ে আরও চিন্তা-গবেষণার আহ্বান জানায়।
Leave a Reply